বাজেট ভাবনায় শঙ্কিত যারা!

bcv24 ডেস্ক    ০৮:০৫ পিএম, ২০১৯-০৬-১৫    641


বাজেট ভাবনায় শঙ্কিত যারা!

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ২ জুন তখনকার সময়ের অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরের দেশের প্রথম বাজেটের আকার ছিল মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকা। এখন মানুষ বাড়ছে, অর্থনীতির আকার বাড়ছে। সেখানে বাজেটও বাড়ার সাথে কর ও রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা বাড়বে- এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের দিকে জোর দিতে হবে। বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য নয়, অতিরঞ্জিত বাজেট, গরিব মারার বাজেট এসব কথাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিলে বাজেট বাস্তবায়নে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন মোটেই অসম্ভব নয়। বড় বাজেট যেন বড় ধরনের প্রতারণা ও বরাবরের মতো লোক দেখানো না হয়।

ইতোপূর্বে দেখা গেছে, ৮০ থেকে ৮২ শতাংশের বেশি ব্যয় সম্ভব হয়নি। বছরের শেষ দিকে উন্নয়ন বাজেট শেষ করতে যেয়ে দুর্নীতি হয় সীমাহীন, কাজও হয় নিম্নমানের।

বরাবরই কিছু পণ্যের দাম কমবে বলে বাজেট প্রস্তাবনায় ঘোষিত হয়। সর্বশেষ বাজেট পাসও হয়। কিন্তু বাজারে গিয়ে দেখা যায় সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র! যে সব পণ্যের দাম কমবে বলে বাজেটে প্রস্তাবনা ছিল- বাস্তবে দেখা গেল বাজেট পাসের পর সেসব পণ্যের দাম কমেতো নাই, বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেড়ে যায়! বাজেট পরবর্তীতে বিভিন্ন অজুহাতে পাল­া দিয়ে বাড়ে বাড়িভাড়াও। ফলে সাধারণ মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নে বাজেট কোনো ভ‚মিকা রাখতে না পারায়, তারা বাজেট ভাবনায় শঙ্কিত হয়, আনন্দিত নয়। বাজেট ঘোষণার পাশাপাশি বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায় খোজা ও তদারকি নিশ্চিত করাটা খুবই জরুরি নয় কী? দুর্ভাগ্য এ জাতির! এ বিষয়টি কে দেখবে! কে শুনবে কার কথা? প্রতিবছর বাজেটকে কেন্দ্র করে কতিপয় অস্বাভাবিক তৎপরতা নতুন কিছু কী? এই যে পরিকল্পনাহীনতার অভিযোগ, এই অভিযোগ কেন বছরের পর বছর ধরে চলবে? কেন এই অভিযোগ দূর করায় কার্যকর কোনো উদ্যোগ সরকার নেবে না?

দ্রব্যমূল্য আকাশছোয়ার বছরব্যাপী অবশ্যম্ভাবী নিয়তি ও অভিন্ন দুর্ভোগের মাত্রা বাজেটের পর অসহনীয় হয় খেটে খাওয়া মানুষের জন্য। এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হয় স্বল্প ও নিম্ন আয়ের মানুষ। অবস্থা এমন যে, গরিব ও সাধারণ মানুষ না খেয়ে মরে যাবে, বড়লোকেরা সব কিনে নিয়ে যাবে! এটা তো কোনো সভ্যসমাজের কাজ হতে পারে না। বাজেটের পর নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর জন্য নড়েচড়ে বসে ব্যবসায়ীরা। বাজেটে ব্যবসায়ীদের যে সব পণ্যের শুল্ক ছাড় দেয়া হয়। সেসব পণ্যের দাম কমে কী? শুল্ক ছাড়ের লাভ যায় ব্যবসায়ীদের পকেটে। বাজারে খাদ্যের পর্যাপ্ত মজুদ ও সরবরাহ থাকার পরও, কেন বাজেটের পর পণ্যের দাম বারে, তা অনুসন্ধান ও প্রতিকার করা কি কোন সরকারের সাধ্য, সামর্থ ও শক্তির বাইরে? 

সাধারণ কর্মজীবী মানুষের প্রকৃত আয় কমেছে। ২০১৩ সালে একজন কর্মজীবী প্রতি মাসে গড়ে ১৪ হাজার ১৫২ টাকা মজুরি পেতেন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এসে তা কমে ১৩ হাজার ২৫৮ টাকা হয়েছে। প্রকৃত আয় কমেছে আড়াই শতাংশের উপরে, অথচ ব্যয় বেড়েছে দুই/তিনগুণ। সার্বিক বিবেচনায় দরিদ্র ও নিম্ন গড় আয়ের মানুষের জন্য বছরের মধ্যে বাজেট যেন নতুন করে উদ্বেগ, আতঙ্ক, ভীতি, হতাশা ও ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। এতে সাধারণের ঋণগ্রস্ত হয়ে পারিবারিক বাজেট সামাল দিতে হচ্ছে।

ইতোপূর্বে শিক্ষক ও সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধির সাথে বাজারদরও বেড়েছে। এতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত জনগণ বেহাল অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। আমরা যে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ থেকে বের হয়ে এসেছি, সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটাকে বাস্তবায়ন করতে হলে কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্ব দিতে হবে। টেকসই উন্নয়ন করতে হলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হবে, কমিয়ে আনতে হবে অর্থনৈতিক বৈষম্য। দেশের একটা গোষ্ঠী যদি বেশি আয় করে, আরেকটা গোষ্ঠী কম আয় করে- তখনই বৈষম্যের সৃষ্টি হয়। রাজধানীর গুলশান, ধানমণ্ডি ও বনানীর যে অর্থনীতি, পুরো বাংলাদেশের অর্থনীতির চিত্র সেটি নয়। অর্থনীতিতে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের সামর্থের সাথে সঙ্গতি থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, অর্থনীতির শক্তি কৃষক, শ্রমিকসহ গ্রামের মানুষ। শুধু সরকারি, আধাসরকারি চাকরিজীবিরাই নয়।

বাজেট কার্যকরে গরিবের জীবন যাপনের প্রয়োজনীয় জিনিসে যেন দাম না বাড়ানো হয়, এটা সর্বসাধারণের প্রত্যাশা। স্বাধীনতার পর দেশ অনেক এগিয়েছে ঠিক, কিন্তু তা অনেকটা ব্যক্তির উন্নয়ন। ব্যক্তির উন্নয়নের লাগাম টানতে পারলে দেশ আরো এগিয়ে যাবে। এমন বাজেট বাস্তবায়ন আমরা চাই না, যা মধ্যবিত্ত ও সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের জন্য অশান্তি ও দুর্ভোগ বয়ে আনবে। 

বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ নিম্নবিত্ত আর মধ্যবিত্ত। তাই নিত্যপণ্যের মূল্য গরিব ও সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা জরুরি। মোটা কাপড়, মোটা চাল, ডাল, আটা, লবণ, চিনি, পেঁয়াজ, তেল প্রভৃতির দাম সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে থাকলেই সর্বসাধারণ সন্তুষ্ট। গরিব মানুষ যাতে কম ভিজিটে ডাক্তার দেখাতে পারে, জীবনরক্ষাকারী ওষুধ যাতে কম মূল্যে কিনতে পারে, সে দিকে লক্ষ রাখাটা অতি জরুরি। করের ভারটা বেশির ভাগই নিম্নবিত্ত মানুষের ওপর পরে থাকে। কেননা তারা আয়ের সবটুকুই অতিপ্রয়োজনীয় ভোগের জন্য ব্যবহার করে। পণ্যের ওপর আরোপিত করের হার, গরিবের আয়ের আনুপাতিক হারের তুলনায় অনেক বেশি। সাধারণ মানুষই ক্ষমতার উৎস। তারা যেন মোটা ভাত, মোটা কাপড় থেকে বঞ্চিত না হয়। যেসব মানুষ বাচার জন্য কঠিন সংগ্রামে ব্যস্ত, রাষ্ট্রের কাছে তার মৌলিক অধিকারটুকু চাওয়া অপরাধ নয়। 


রিটেলেড নিউজ

বাংলাদেশে সবচেয়ে মজলুম গোষ্ঠী সাংবাদিকরাই

বাংলাদেশে সবচেয়ে মজলুম গোষ্ঠী সাংবাদিকরাই

বাবলু চৌধুরী

বাংলাদেশে শ্রমিক হিসেবে সবচেয়ে মজলুম গোষ্ঠী হল সাংবাদিকরা। তাদের কেবল বেতন সামান্য তাই নয় সাংবাদ... বিস্তারিত

কানাডায় নারীর হাইমেন সার্জারি এখনও বৈধ কেন?

কানাডায় নারীর হাইমেন সার্জারি এখনও বৈধ কেন?

বাবলু চৌধুরী

আমরা এখন ২০২২ সালের সময়ের জীবন যাপন করছি। এমন সময়ে যদি শোনেন ভার্জিনিটি একটি পণ্য আপনার সামর্থ্য থ... বিস্তারিত

বিশ্বাস ও সম্মান গাঁথা থাকলে সব ভালোবাসাই প্রেমের কাব্য

বিশ্বাস ও সম্মান গাঁথা থাকলে সব ভালোবাসাই প্রেমের কাব্য

বাবলু চৌধুরী

ইতিহাসে ভালোবাসার নানা গল্প। গল্প নিয়ে মহাকাণ্ড। কেউ বলেন ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনে রোমান দেব-দেবীর রান... বিস্তারিত

ওরা ধর্ষক, আমরা দর্শক: বিকল রাষ্ট্রযন্ত্রের ‘কুম্ভকর্ণের সুখনিদ্রা’ কখন ভাঙবে?

ওরা ধর্ষক, আমরা দর্শক: বিকল রাষ্ট্রযন্ত্রের ‘কুম্ভকর্ণের সুখনিদ্রা’ কখন ভাঙবে?

বাবলু চৌধুরী

ডিসকভারি চ্যানেলে বাঘ যখন তার হিংস্র থাবায় শিকারীকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে তাকে ভক্ষণ করে তখন আমরা শ... বিস্তারিত

শেখ হাসিনার হাতে পিতার পতাকা

শেখ হাসিনার হাতে পিতার পতাকা

তোফায়েল আহমেদ

১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে বাংলার স্বাধীনতার লাল সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। মওলানা আবদুল হাম... বিস্তারিত

বিষ্ফোরণে নিহত আবুল কাশেমের পরিবারের কী হবে?

বিষ্ফোরণে নিহত আবুল কাশেমের পরিবারের কী হবে?

মুহাম্মদ নাজমুল হাসান

যৌবনের পুরো সময়টা কাটিয়েছিলেন প্রবাসে। সুখ নামক সোনার হরিণ ধরা হয়নি ওমানের তপ্ত রোধে ১৮ বছরের বেশ... বিস্তারিত

সর্বশেষ

তপসিলের পর তেজগাঁও কার্যালয়ে বসবেন শেখ হাসিনা

তপসিলের পর তেজগাঁও কার্যালয়ে বসবেন শেখ হাসিনা

bcv24 ডেস্ক

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপসিল ঘোষণার পর থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য আলাদা কার্য... বিস্তারিত

১২৪ টাকায়ও রেমিট্যান্সের ডলার কিনছে ব্যাংক

১২৪ টাকায়ও রেমিট্যান্সের ডলার কিনছে ব্যাংক

bcv24 ডেস্ক

এক বছর আগে ঘোষিত দরের চেয়ে ১-২ টাকা বেশি দামে রেমিট্যান্সের ডলার কেনায় ছয়টি ব্যাংকের বিরুদ্ধে শাস্... বিস্তারিত

২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১৮৯৫

২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১৮৯৫

bcv24 ডেস্ক

সারাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ৮ জন... বিস্তারিত

চোখের ইশারায় কাজ করবে কম্পিউটার!

চোখের ইশারায় কাজ করবে কম্পিউটার!

bcv24 ডেস্ক

চোখের ইশারায় খুলে যাবে অ্যাপ, আঙুলে ছুঁয়ে সরাতে হবে স্ক্রিন। মাথা নাড়ালেই হবে অনেক কাজ। প্রযু... বিস্তারিত